সুবল রায়:
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী দুই সন্তান। একজন চলাফেরা করতে অক্ষম, অন্যজন দীর্ঘ ১১ মাস ধরে শয্যাশায়ী প্যারালাইজড অবস্থায়। আর এদেরই সেবা-যত্ন করে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের খোপরা গ্রামের ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধ আশরাফ আলী যেন এক জীবন্ত সংগ্রামের নাম। ৩৩ বছর আগে স্ত্রী শাহিনা বেগমের মৃত্যুর পর থেকে তিনি একাই লালন পালন করে যাচ্ছেন দুই ছেলে মোকলেসুর রহমান (৪০) ও লাইসুর রহমানকে (৩৫)।
শারীরিকভাবে অক্ষম দুই সন্তানের প্রতিদিনের খাওয়া, গোসল, ওষুধপত্র, সেবাসহ সকল দায়িত্ব আশরাফ আলীর কাঁধে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও সন্তানদের মুখে দু-মুঠো আহার তুলে দিতে তিনি এখনও সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন দিনমজুরের কাজ করেন। সকালবেলা তাদের ঘরে রেখে কাজে যান, আর বিকেল গড়ালেই ছেলেরা পথ চেয়ে থাকে বাবার ফেরার অপেক্ষায়।
আশরাফ আলী বলেন, তাদের মা মারা যাওয়ার পর থেকে একাই সব দায়িত্ব পালন করছি। গোসল, খাওয়ানো, সবকিছু আমি করি। কাজও বেশি করতে পারি না, কারণ ওদের পাশে থাকতে হয়। সরকারি ভাতা আর যেটুকু আয় করি, তা দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি।
তিনি আরও বলেন, যদি কেউ একটা দুধের গাভী গরু আর কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করতেন, তাহলে দুধ বিক্রি করে ছেলেদের নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারতাম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আশরাফ আলী ও তার ছেলেরা অমানবিক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। প্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের জন্য জীবনযাপন খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
এই পরিবারটির খোঁজ মেলে সম্প্রতি এলাকায় একটি বেসরকারি সংগঠন “একজন বাংলাদেশ” নামের মাঠকর্মী মুক্তা পারভীনের কাছ থেকে। বিষয়টি জানানো হলে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস।
মামুন বিশ্বাস জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদের বাড়িতে ছুটে যাই। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমি তাদের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি দুধের গাভী কিনে দিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের জন্য প্রতি মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। শুধু আমি না—এলাকার সচেতন সমাজ, সরকার ও অন্যান্য সংস্থাও যদি এগিয়ে আসে, তাহলে হয়তো উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে এই দুই ভাইয়ের অবস্থারও কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে।
এই মানবিক গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবতা এখনও বেঁচে আছে—শুধু প্রয়োজন একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
Leave a Reply